Dainik Sangbad – দৈনিক সংবাদ
Image default
ট্রেন্ডিং

ইংল্যান্ডের রানী থেকে ইন্দিরা গান্ধী কে মুগ্ধ করেছে বাংলার বিষ্ণুপুরি বালুচরি শাড়ি, জানেন এর ইতিহাস?

সময়কাল ঊনবিংশ শতাব্দীর পাঁচের দশক, বাঁকুড়া জেলার সোনামুখির মনোহর ঠাকুরের বিখ্যাত মেলার ভিড়ে এক মহিলার শাড়ির চমক ছিল নজরে পড়ার মত। এমন শাড়ি বাঁকুড়া জেলার মানুষ এর আগে চোখেই দেখেনি। আর এই শাড়ী দেখেই রাতের ঘুম উড়ে গেল বিষ্ণুপুরের প্রবাদপ্রতিম বয়ন শিল্পী অক্ষয় কুমার দাশের। শয়নে স্বপনে সব সময় তার মনে চলছে প্রতিজ্ঞা, ঐ রকম শাড়ি তাকে তৈরী করতেই হবে। চিন্তা ভাবনা করে লেগে পড়লেন শাড়ী বোনার কাজে। ভাগ্যও যেন সহায় হল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজ্যের বস্ত্র শিল্পে উন্নতি সাধন করতে Regional Design Culture এর তৎকালীন সহপ্রধান শ্রী শ্যামাপদ বাবু বেছে নিলেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরকেই। আর সেই বিষ্ণুপুর সিল্ক খাদি সেবা মন্ডলের পরিচালক হনুমান দাস সারদার সহায়তায় অক্ষয় কুমার দাস আনলেন বাংলার শাড়ির ইতিহাসে এক যুগান্তকারী বিপ্লব। বয়ন করলেন বালুচরী শাড়ী। সাথে সাথে ইতিহাসে বিষ্ণুপুরি বালুচরির প্রপিতামহ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হল অক্ষয় কুমার দাসের নাম।

History of Baluchori Saree

অবশ্য বালুচরী শাড়ির উৎস বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে নয়। বরং ব্রিটিশ বঙ্গে নিজেদের অধিকার কায়েম করার আগে মুর্শিদাবাদ জেলায় এই শাড়ীর যাত্রা শুরু। জানা যায় মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে, উত্তর ভারতের কিছু তন্তু বয়ন শিল্পী পালিয়ে এসে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর রাজধানী মুর্শিদাবাদে বসবাস শুরু করেন। এই সব বয়ন শিল্পীদের কাজ দেখে অভিভুত হলেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। উত্তর ভারতের এই বয়ন শিল্পীরা মুলত কারিগর ছিলেন ‘ঢাকাই মসলিন’ ও ‘জামদানি’ শাড়ী। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এনাদের বলেন নতুন ধরনের শাড়ি তৈরি করতে। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে এই সব শিল্পীদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় বালুচরি শাড়ী। পরবর্তী সময়ে এরা নানা কারনে এসে উপস্থিত হন মল্লরাজের রাজধানী বিষ্ণুপুরে। আর সেই সব শিল্পীর সৃষ্টি বলুচরী শাড়ীই নতুন করে রূপ পে অক্ষয় কুমার দাসের হাতে।

অক্ষয় কুমার দাসের অনুপ্রেরণায় বালুচরি শাড়ীর নতুন রূপে নবজন্ম ঘটলেও পরবর্তী সময়ে বহু শিল্পী এই শাড়ীর বয়নে নিজস্ব ছাপ ছেড়ে গেছেন। তাদের হাত ধরেই তৈরী হয়েছে ‘অগ্নিবীনা’, ‘মালঞ্চ’, ‘মালবিকা’, ‘মোনালিসা’ নামে এসেছে ইত্যাদি বহু যুগান্তকারী শাড়ি। কল্কা, হরিন, লতা-পাতা, ময়ূর প্রভৃতি নক্সার স্থান নানা শিল্পী আনেন বালুচরি তে। এরপরে আরও শিল্পীর পরিকল্পনায় আসে কাহীনি ধর্মী বালুচরি শাড়ি। ইতিহাসের ধারায় বিষ্ণুপুরের বালুচরী শাড়ী সময়ের সাথে এগিয়ে গেছে তার নিজের ছন্দে। বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া এমনকি বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে এই শাড়ীর নাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশ বিদেশের নানা প্রান্তে। বিষ্ণুপুরে আগত নানা বিশিষ্টজনকে সন্মানিত করেছে বালুচরি শাড়ি। তৎকালীন রাজ্যপাল পদ্মজা নাইডু কে উপহার দেওয়া হয়েছিল বালুচরী ‘স্মৃতিরেখা’ শাড়ী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া হয়েছে ‘মালবিকা’ শাড়ী। এমনকি সুদুর ইংল্যান্ডের রনি ২য় এলিজাবেথকেও উপহার হিসাবে পাঠানো হয়েছে বালুচরি শাড়ী।

Related posts

১১৮ বছর বয়সে এসে দীর্ঘায়ু হবার গোপন রহস্য জানালেন বিশ্বের প্রবীণতম মহিলা! কি সেই রহস্য

News Desk

ওমিক্রন সংক্রমন জন্ম দিতে পারে আরও ভয়ঙ্কর কোনও করোনা প্রজাতির, সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

News Desk

অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে, গলায় মঙ্গলসূত্র পরে সেজে ঘটালো মর্মান্তিক কান্ড!

News Desk