ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন থেকে যাত্রা শুরু করে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ এপ্রিল গভীর রাতে সমুদ্রে ভেসে থাকা হিম শৈলের সাথে ধাক্কা লেগে যাত্রী সমেত ডুবতে শুরু করেছিলো তৎকালীন অত্যাধুনিক জাহাজ টাইটানিক। একটু একটু করে সলিল সমাধি ঘটে জাহাজটির। মানুষের জলযানের ইতিহাসে টাইটানিকের নাম বহুল আলোচিত হয়ে রয়েছে। এটি ঐ সময়ের সবচেয়ে বিশালাকর ও বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজ ছিল। সাচ্ছন্দতা এবং অত্যাধুনিকতার চরম উদাহরণ ছিল এই জাহাজ।
টাইটানিকের কথা উঠলেই সেই জাহাজের ডুবে যাওয়া এবং সাথে সাথে যাত্রীদের মৃত্যুর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তাও আবার প্রথম যাত্রাতেই! এই জাহাজডুবির ঘটনায় মৃত্যু হয় ১,৫১৩ জন যাত্রীর। ভাগ্যের জোরে বেঁচে যাওয়া ৬৮৭ জন যাত্রীর প্রাণ রক্ষা পেলেও পরবর্তী জীবনে তাদের বয়ে বেড়াতে হয়েছে এই দুঃস্বপ্ন।
যে জাহাজ কে মনে করা হয়েছিল কোনো দিন ডুববে না সেই জাহাজ যাত্রা শুরুর মাত্র চার দিন পর ডুবে যায়। কিন্তু জানেন কি এই জাহাজের সঙ্গে মানুষের মৃত্যুর সম্পর্ক কিন্তু তারও অনেক আগে থেকে। জাহাজ সমুদ্রের জলে ভাসার আগে থেকেই অনেক মানুষের মৃত্যুর সাক্ষী হতে হয়েছিল টাইটানিককে। টাইটানিক জাহাজটির নির্মাণকার্য শুরু হয় ১৯০৭ সালে। পাঁচ বছর একটানা কর্মযজ্ঞের পর ১৯১২ সালে জাহাজটি তৈরীর কাজ শেষ হয়। হল্যান্ডের কোম্পানি ‘হোয়াইট স্টার লাইন’ টাইটানিকের নির্মাণ করেন। ৬০ হাজার টন ওজন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই বিশালাকার জাহাজটি তৈরী করতে তৎকালীন ব্যায় হয়েছিল ৭৫ লাখ ডলার। এত বড় আকারের জাহাজের কথা ওই সময় বানানোর কথা মানুষ ভাবতেও পারতেন না। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই জাহাজের নির্মাণকাজ ছিল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ন। টাইটানিক তৈরী করতে গিয়ে মারা যান অন্তত আটজন শ্রমিক। হয় অনেক উঁচু থেকে পড়ে গিয়ে বা কোনো ভারী জিনিসের নিচে পিষে মারা গিয়েছিলেন তাঁরা। এছাড়াও গুরুতরভাবে আহত হয় প্রায় ২৪৬ জন মানুষ। টাইটানিক সমুদ্রে ভাসার ঠিক আগের মুহূর্তে জেমস ডবিন নামে এক ব্যক্তি জাহাজের নিচে পিষে মারা গিয়েছিলেন। টাইটানিককে সমুদ্রে ভাসানোর আগে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য অনেক কাঠের গুড়ি রাখা ছিল এর সামনে। জাহাজ ভাসার আগে সেগুলিকে সরাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। টাইটানিকের শুরুটা তাই হয়েছিল মৃত্যু দিয়েই। অন্তিম পরিণতিতেও সেই মৃত্যুর অভিশাপ নিয়ে জলের তলায় যায় টাইটানিক। টাইটানিক জাহাজটি যেই স্থানে ডুবেছিল সেই স্থানের নাম হলো ‘গ্রেট ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ড’। মাত্র চার দিন বয়সে রাত ১১-৪০ মিনিটে হিমশৈলের সাথে ধাক্কা খাওয়ার পর মাত্র আড়াই ঘন্টা পর বহু মানুষকে নিয়ে সমূদ্রের অতলে তলিয়ে যায় টাইটানিক। যা আজও বিশ্ববাসীর কাছে রহস্যময়।